বুধবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৬:১৭ অপরাহ্ন

ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক অগ্নিশিখা পত্রিকা
ঢাকা থেকে প্রকাশিত জাতীয় দৈনিক অগ্নিশিখা পত্রিকা এবং  অনলাইন ও ডিজিটাল মাল্টিমিডিয়া  এর জন্য সম্পূর্ণ  নতুনভাবে সারাদেশ থেকে জেলা, উপজেলা,বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও সরকারি কলেজ,পলিটেকনিকে একযোগে সংবাদকর্মী আবশ্যক বিস্তারিত জানতে ০১৮১৬৩৯৩২২৩

কর্ণফুলী আ.লীগের সভাপতি ফারুক চৌধুরী’র ছেলের সরকার বিরোধী পোস্টে তোলপাড়!

মামুন খাঁন, নিজস্ব প্রতিবেদক

চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বর্তমান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী তাঁর ছেলে জিব্রান সামীকে নিয়ে দলীয় নেতাদের কাছে তোপের মুখে পড়েছেন। কেননা, কর্ণফুলী আওয়ামী লীগের এই কথিত হাইব্রিড নেতার ছেলে জিব্রান সামী ‘চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন’ কে সমর্থন জানিয়ে ও রাষ্ট্রীয় শোক দিবস প্রত্যাখ্যান করে নিজের ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে দুটি পোস্ট দেন।

যা দেখে চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃমূল নেতা-কর্মীরা ফারুক চৌধুরী’র রাজনীতিক ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়েও প্রশ্ন তোলেছেন। শুধু কর্ণফুলী নয়, আনোয়ারা, পটিয়াসহ দক্ষিণ জেলার সিনিয়র নেতারাও বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন। দেখা গেছে, গত ১৬ ও ১৭ জুলাই ফারুক চৌধুরীর ছেলে জিব্রান পর পর দুটি সরকার বিরোধী পোস্ট ও পেইজ লিঙ্ক শেয়ার করেন নিজের ফেসবুকে। যদিও পরে সমালোচনার মুখে পড়ে ফেসবুক থেকে এসব পোস্ট সরিয়ে দিলেও তা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে স্ক্রিনশট আকারে ঘুরছে। কর্ণফুলীর অনেকেই তা শেয়ার করেছেন।

তবে জিব্রান সামী সরকারের সমালোচনা করে দেওয়া এসব স্ট্যাট্যাসের সাথে কয়েকটি লাইন জুড়ে দেন। তা হলো-‘রাষ্ট্রীয় শোক দিবস প্রত্যাখ্যান, এভাবেই ছিলাম বেঁচে, এভাবে আছি বেঁচে, এভাবে থাকবো তাই তো।’ এছাড়াও জামায়াত শিবির পরিচালিত এই দুটি পেইজ ‘উরিড বাট কিউট পোস্টিং ও এ ফর আয়ান’ নামক পেইজ পোস্টে লিখা আছে, ‘কখনো ভাবিনি আমার টাইমলাইনে লাল রঙের বন্যা দেখে এত খুশি হব। এবার তাদের লাল কার্ড দেখানোর পালা।’ একজন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলের ফেসবুক পোস্টে এমন ছবি দেখেও কথিত হাইব্রিড নেতা ফারুক চৌধুরী’র কোন সাড়া শব্দ পাওয়া যায়নি। বরং গোপনে ছেলেকে সমর্থন জানিয়েছেন বলে তাঁর বাড়ির পাশের লোকজনেই জানিয়েছেন।

তবে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির ছেলের এমন পোস্ট দেখে কর্ণফুলী উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ইমতিয়াজ উদ্দিন বলেন, ‘ছেলের পোস্টে পিতার মুখোশ উন্মোচিত হলো।’ দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সংগঠক ও কর্ণফুলী যুবলীগ নেতা ইয়াসির আরাফাত বলেন, ‘নেতার পা চাটিয়ে দুইবার নৌকা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতির পুরস্কার হলো রাজাকারময় বাচ্চা পয়দা বাহ্।’

এছাড়াও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ফারুক চৌধুরী বলেন, ‘ওর নানা খন্দকার মোশতাকের রাজনৈতিক সহকারী ছিলেন। তার নাতি তো খন্দকার মোশতাকের অনুসারী হবে অবাক হবার কিছু নেই। ওর নানা, ফারুক সাহেবের শ্বশুর আবু বক্কর ছিদ্দিক চৌধুরী বর্তমানে মহানগর জামায়াতের বড় নেতা।’

ফারুক চৌধুরী’র অতীত অনুসন্ধানে উঠে আসে বিস্ময়কর তথ্য, কর্ণফুলীতে নব্য এই আওয়ামী নেতার দাপটে; কোনঠাসা ত্যাগিরা! কর্ণফুলীতে চলছে তার একক শো। যদিও প্রচলন রয়েছে বিএনপি-জামায়াত ও জাপার ছাত্রসমাজ থেকে সরাসরি তিনি আওয়ামী লীগে প্রবেশ করেছেন। নব্য আওয়ামী লীগারদের দাপটে চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে দলের অনেক ত্যাগী নেতা-কর্মীর মধ্যে হতাশা দেখা দিয়েছে। কতিপয় হাইব্রিড উপজেলা নেতাকর্মীদের খবরদারি ও মাদক ব্যবসায় দলে বিব্রতকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যেন কোন মুহুর্তে ঘটতে পারে অনাকাংখিত ঘটনা।

কর্ণফুলী উপজেলায় চৌধুরী নামে এই হাইব্রিড নেতা আওয়ামী লীগের সাথে উৎপ্রতভাবে জড়িয়ে গেলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় বলে অনেকের অভিযোগ করেন। এই হাইব্রিড নেতার দাপটে দলের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা থেকে শুরু করে দলের প্রকৃত ত্যাগি ও সিনিয়র নেতারা মূল্যায়িত না হয়ে অনেকটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছে। অনেকেই আবার স্থানীয় সংসদ সদস্য ও  সাবেক ভূমিমন্ত্রী থেকেও দুরে অবস্থান নিয়েছেন।

নাম তার ফারুক চৌধুরী হলেও এলাকার লোকজন তাকে চিনে কম্পিউটার ফারুক নামে। ৭ বছর আগেও যাকে কর্ণফুলীতে কেউ দেখেননি। ছাত্রাবস্থায় যিনি জাপার ছাত্রসমাজ করতেন বলে তার পটিয়ার বন্ধুরা তথ্য দিয়েছেন। যিনি পুর্বে কোন আওয়ামী রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন না। এমনকি কখনো ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষক লীগ, শ্রমিক লীগেও ছিলেন না। আওয়ামী লীগের কোন অঙ্গসংগঠনের সাথে সম্পৃক্ত না থেকেও এই ফারুক চৌধুরী চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার এক শীর্ষ আওয়ামী নেতাকে ম্যানেজ করে ২০১৩ সালে বাগিয়ে নেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক।

২০১৭ সালে নৌকা প্রতীকে নবসৃষ্ট কর্ণফুলী উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বনে যান। ২০১৪ সালের ১২ অক্টোবরে গঠিত কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের এডহক কমিটি ভেঙে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর ৭১ সদস্যের কমিটি অনুমোদন দিলে পুনরায় এই ফারুক চৌধুরীকে সভাপতি ঘোষণা করে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ। পরে কর্ণফুলী উপজেলা কমিউনিটিং পুলিশের সভাপতি। কমিউনিটিং পুলিশের পদটি রাজনৈতিক না হলেও হাইব্রিডে জয়জয়কার নিমিষেই এক নেতার চার পদ লাভ। এ ধরনের নেতাদের অনেকে বলে থাকেন হাইব্রিড কিংবা কাউয়া নেতা।

যা আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র বিরোধী। অনেকের কাছেই বিষয়টি কল্পনাতীত কিংবা অবিশ্বাস্য হলেও কর্ণফুলী রাজনীতিতে এটাই সত্য হয়ে উঠেছে! কর্ণফুলী উপজেলায় তিনি আজ অঘোষিত বড় নেতা। সব কিছুতেই তার সিদ্ধান্ত আর মতামত প্রাধান্য পান। তার ভয়ে তটস্ত থাকে স্বয়ং উপজেলার সকল কর্মকর্তা কর্মচারী। তার কথা মতো না হলে প্রায় সময় বকাঝকা ও সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ভয় শোনতে হয়। উপজেলায় যেন চলছে ওয়ানম্যান শো। তার কাছে পুরো উপজেলার নেতাকর্মীরা জিম্মি হয়ে আছেন। যাকে যেভাবে পারেন সেভাবে তিনি চালান। তার এমন একনায়কতন্ত্রসুলভ কর্মকান্ডে সাবেক মন্ত্রীর ঘনিষ্টমহলও তিতি বিরক্ত। এ নিয়ে বর্তমান প্রশাসনে চাপাক্ষোভ বিরাজ করছে।

এদিকে, জাতির জনকের সুযোগ্য কণ্যা বর্তমান মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে কর্ণফুলী এলাকায় হাইব্রিড টাউট-বাটপাররা আওয়ামী লীগে জড়িয়ে পড়েছে। তাদেরকে বিভিন্ন জনসভা, কর্মীসভা সহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতে কেন্দ্রীয় চট্টগ্রাম মহানগর ও স্থানীয় থানা পর্যায়ের দলীয় নেতাকর্মীদের সাথে প্রথম সারির চেয়ারে বসতে দেখা যায়।

এদের অনেকেই এখন গা বাঁচাতে আওয়ামী লীগের ওপর ভর করেছে। সুযোগ বুঝে কৌশলে বোল পাল্টাতে পারে তাতে কোন সন্দেহ নেই বলে জানিয়েছেন জেলার রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সচেতনমহল । বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে নজর দেওয়া একান্ত প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তা না হলে আগামীতে ওই সকল হাইব্রিড টাউট বাটপার লোকদের ধারাই আওয়ামী লীগের বড় ধরনের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা রয়েছে।

কর্ণফুলী উপজেলার আওয়ামী লীগের মাঠ পর্যায়ের ত্যাগী ও তৃণমূল নেতারা মনে করছেন, আওয়ামী লীগকে আগামী দিনে শক্তিশালী করতে থানা, ওয়ার্ড ও ইউনিট পর্যায়ের কমিটি গুলোকে এখন থেকে সক্রিয় করে গড়ে তুলতে হবে। এখানে যারা প্রকৃত আওয়ামী লীগ করে, দীর্ঘদিন দলের সঙ্গে যারা যুক্ত আছে, যারা বঙ্গবন্ধুর আদর্শে বিশ্বাসী তাদেরকে নিয়ে কমিটি করার।

কিন্তু অভিযোগ উঠেছে নব্য আওয়ামী নেতা ফারুক চৌধুরী দলে পাকাপোক্ত হয়ে বিএনপি জামায়াতের একাধিক নেতাকর্মীদের মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে দলীয় পদে বসিয়েছেন এবং বিএনপির ৫ নাশকতা মামলার আসামী জয়নাল গ্রেপ্তার হলে কর্ণফুলী থানা হতে নিজেই মুচলেখা দিয়ে ছাড়িয়ে নিয়েছেন। এছাড়াও জাপার ছাত্রসমাজ হতে আগত, দুর্ধর্ষ ছাত্রদল ক্যাডার ও বিএনপির লোকজনকে দলে পাকাপোক্ত করেছেন।

সবচেয়ে অবাক করা বিষয়, ১৯৭৫ সালের পর জাতির জনকের হত্যাকারী খোন্দকার মোস্তাক আহমেদ এর পিএস ছিলেন এই ফারুক চৌধুরীর আপন শ্বশুর আবু বক্কর চৌধুরী। বহু নাশকতা মামলার আসামি তার আপন শালা ইমরুল জামায়াতের স্বশস্ত্র ক্যাডার ও সাথী। দক্ষিণ জেলার বিএনপি নেতা এসএম মামুন মিয়া তার আপন ভাগ্নে জামাই। ২০১৩ সালের নির্বাচনে তিনি সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বিপক্ষীয় প্রার্থী নুরুল কাইয়ুম চৌধুরীর প্রস্তাবকারী ছিলেন। অথচ বর্তমানে বোল পাল্টিয়ে জাবেদ এমপির ছায়ায় বলে অনেকের অভিযোগ।

নিজেকে সে প্রয়াত সংসদ সদস্য আখতারুজ্জামান চৌধুরী বাবু মিয়ার কর্মী দাবি করলেও জীবিত থাকাকালে বাবু মিয়া কখনো এই সুবিধাবাদী ফারুক চৌধুরীকে কোন পদ পদবীতে রাখেন নি। ২০১৩ সাল অর্থ্যাৎ বাবু মারা যাওয়ার আগ পর্যন্ত এই ফারুক চৌধুরী কে কখনো দক্ষিণ জেলা কিংবা কর্ণফুলী উপজেলার কোন সদস্য পদেও রাখেননি। পদ পদবি তো দুরের কথা ২০১৩ সালের উপ-নির্বাচনে বর্তমান মন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার প্রথম ৬ মাস এই হাইব্রিড ফারুক চৌধুরী কখনো সাবেক ভূমিমন্ত্রীর কাছে ভিড়তে পারেননি।

কেন তার বিরুদ্ধে এতসব অভিযোগ আর ছেলের রবিরোধী পোস্ট বিষয়ে জানতে চাইলে কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরী বলেন, ছেলের বয়স কম। বুঝদে পারেনি। পরে আমার নজরে আসলে বকা দিয়েছি। পোস্ট সরিয়ে দিয়েছে। অন্যদিকে, আমি আগে ছাত্রলীগ বা যুবলীগ করিনি সেটা সত্য তবে হাইব্রিড নই।’

এ অবস্থা দেখে আওয়ামী লীগের ত্যাগি তৃণমূল পর্যায়ের নেতারা মনে করেন, যেসব টাউট-বাটপাররা দলে ভিড়ে অর্থের বিনিময়ে দালালি করে বিএনপি-জামায়াত পরিবারকে চাকরিসহ অন্যান্য সুবিধা দিচ্ছে তাদেরকে দল থেকে বিতাড়িত করতে হবে। কেননা ওরাই ভাইরাস, ওরাই ক্ষতিকর, ওরাই সুবিধাবাদী।

দক্ষিণ জেলা জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার ইসলাম আহমেদ বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভানেত্রী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা বিভিন্ন সময় উপলব্ধি করে বলেন ৭৫ পরবর্তী ৯৬ ও ২০০১ থেকে ২০০৭ সালে দলের দুঃসময়ে যারা পাশে ছিলেন তারাই মূলত প্রকৃত আওয়ামী লীগার ও ত্যাগি। বর্তমানে নব্য আওয়ামীগার ও দুর্নীতিবাজদের দাপটের সময়ে এসব ত্যাগি কর্মীদের মূল্যায়ন করা সময়ের দাবি।

দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, ‘কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীর ছেলে যদি এ ধরনের পোস্ট দেয় তাহলে সাধারণ ছেলেরা কি করবে। এটা আমাদরে জন্য অপমানের কথা। আর কিছু বলার নেই।’

Please Share This Post in Your Social Media

© All rights reserved ©2022 thedailyagnishikha.com
Design & Developed BY Hostitbd.Com